সোমবার ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’-এর প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দরিদ্র মানুষ এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো জরুরি খাতে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া বিল গেটস ফাউন্ডেশনের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের মহামারী বিশ্বের সবজায়গাতেই মানুষের জন্য এক বিরাট ধাক্কা।
মানুষের অর্থসম্পদ তো বটেই, সামগ্রিকভাবে বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য এমনভাবে বাড়ছে যেমনটি কয়েক দশকেও দেখা যায়নি।
বিশ্বজুড়ে চরম দারিদ্র্যর মুখোমুখি হয়েছে বিপুল সংখ্যক মানুষ। জীবন-জীবিকার মানন্নোয়নের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা মুখ থুবড়ে পড়ছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন টিকা কর্মসূচি ৯০ এর দশকের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি, জনস্বাস্থ্য, মানব কল্যাণ, শিক্ষা এবং অন্যান্য টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায় অগ্রগতির বিষয়টি পর্যালোচনা করে গেটস ফাউন্ডেশন তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, সব লক্ষ্যমাত্রাই সঠিক পথে এগুচ্ছিল।
কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে নিয়ে গেছে। বেড়েছে অসমতা। এ মহামারী যে কেবল অগ্রগতি থামিয়ে দিয়েছে তাই নয়, বরং তা আরও পিছিয়ে দিয়েছে।
২০১৭ সাল থেকে ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’ উন্নয়নশীল বিশ্বে দারিদ্র্য এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অগ্রগতির শুভ বার্তা তাদের বার্ষিক ‘গোলকিপারস প্রতিবেদন’ প্রকাশ করে আসছে।
কিন্তু এবছর পরিস্থিতি কতটা খারাপ হয়েছে সেটিই কেবল এই প্রতিবেদনে তুলে ধরার আছে, বলেছেন গেটস ফাউন্ডেশনের সিইও মার্ক সুজম্যান। প্রতিবেদন অনুযায়ী:
২০ বছরের মধ্যে প্রথম বিশ্বে বাড়ছে দারিদ্র্য:
টানা ২০ বছর ধরে গরিবি হঠাও কর্মসূচিতে অগ্রগতির পর এবছর প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষ চরম দরিদ্র হয়েছে, যাদের দৈনিক আয় ১.৯০ ডলারেরও কম।
এ পরিস্থিতি কেবল যে গরিব দেশগুলোতে দেখা যাচ্ছে তা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনী দেশগুলোতে সম্প্রতি কয়েক বছরে আয়ের দিক থেকে অসমতা ছিলই। ধনীরা আরও দ্রুত ধনী হয়েছে। মহামারীর এ বছরে ধনী-গরিবের মধ্যকার সেই ফারাক লাফিয়ে বেড়ে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
ইউএস সেনসাস ব্যুরোর হিসাবমতে, আমেরিকানদের এক তৃতীয়াংশই অগাস্টে মহামারীর কারণে বিল পরিশোধ করতে সমস্যায় পড়েছে। এক্ষেত্রে কৃষ্ণাঙ্গ এবং ল্যাটিন আমেরিকান বংশোদ্ভুতরা বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে।
বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবমতে, ১৯৯৮ সালের পর বিশ্বে এবারই প্রথম দারিদ্র্যের হার নাটকীয়ভাবে বাড়ছে। মন্দায় পড়েছে বিশ্বের অর্থনীতি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভয়াবহ মন্দায় বিশ্ব
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ক্ষতির হিসাবে গেটস ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন বলছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষের পর এ বছরই বিশ্ব সবচেয়ে ভয়াবহ মন্দায় পড়েছে। ২০০৮ সালের বিশ্বমন্দার তুলনায় জিডিপি’র হার দ্বিগুণ নিচে নেমেছে।
এর আগে সর্বশেষ বিশ্বে বহু দেশের অর্থনীতিতে একসাথে মন্দা দেখা গিয়েছিল ১৮৭০ সালে। এবারের মন্দা পরিস্থিতির মধ্যে ভাইরাসের বিস্তার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চরম দরিদ্র মানুষের সংখ্যাও ৭ শতাংশ বেড়েছে।
গেটস ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অর্থনীতির পূর্বাভাস তুলে ধরে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি চাঙ্গা করার চেষ্টায় এরই মধ্যে ১৮ লক্ষ কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে। তারপরও ২০২১ সালের শেষ নাগাদ বিশ্ব অর্থনীতিতে ১২ লক্ষ কোটি বা তারও বেশি ডলারের ক্ষতি হবে- যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বৈশ্বিক জিডিপি’র সবচেয়ে বড় ক্ষতি।
সূত্র, বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম